লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

রাতে লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা

লবঙ্গ সর্দি-কাশির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার পাশাপাশি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। শরীরের যত্নের পাশাপাশি রান্নায়ও স্বাদ বৃদ্ধিতে লবঙ্গের জুড়ি নেই। তবে মাত্রাতিরিক্ত লবঙ্গ খাওয়াতেও রয়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। চলুন, জেনে নিই লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতার নানা দিক।

লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা

# লবঙ্গ দাঁতের ব্যথা ও মাড়ির ক্ষয় নিরাময়ে বেশ কার্যকর। লবঙ্গের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান শরীরে কিছু বিক্রিয়া করে নিমেষে দাঁতের যন্ত্রণা কমিয়ে দেয়।

# যাত্রাপথে বমি বমি ভাব দূর করতে মুখে লবঙ্গ দিয়ে রাখা যেতে পারে। এটি মুখে সুগন্ধি তৈরি করে বমি বন্ধে বেশ কাজ করে। বমির ভাব দূর করতে মুখে লবঙ্গ নিয়ে চুষতে পারেন অন্তঃসত্ত্বা নারীরাও।

# সর্দি-কাশি ও ঠান্ডা প্রতিরোধে লবঙ্গকে মহৌষধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। এটি চিবিয়ে রস গিলে খেলে বা লবঙ্গ মুখে রেখে চুষলে ঠান্ডা লাগা, অ্যাজমা, সর্দি, কফ, গলা ফুলে ওঠা আর শ্বাসকষ্টে বেশ সুফল পাওয়া যায়।

# সাইনোসাইটিস রোগীদের চিকিৎসায় ওষুধ হিসেবে লবঙ্গ ব্যবহার করেন অনেকে। সাইনাসের কষ্ট কমাতে লবঙ্গের বিশেষ উপাদান ইগুয়েনাল সাহায্য করে।

# মাথাব্যথা ও মাথা যন্ত্রণা কমাতে লবঙ্গের জুড়ি নেই।

# পেট ফাঁপা ও পেটের অসুখ নিরাময়ে লবঙ্গ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এ উপাদান এনজাইম বৃদ্ধি করে পেটব্যথা, অজীর্ণ, বদহজম, খিদে না হওয়া, পেটের গ্যাস ও বায়ু এমনকি কলেরা বা আন্ত্রিক রোগ নিরাময় করে।

# প্রচণ্ড স্ট্রেস ও উৎকণ্ঠা কমাতে এক টুকরো লবঙ্গ মুখে ফেলে চুষে খেয়ে ফেলুন। এমনকি লবঙ্গের চা পানেও মেজাজ ফুরফুরে হয়ে উঠবে।

# ব্রণের চিকিৎসায় লবঙ্গের ব্যবহার বেশ পুরোনো। লবঙ্গের পেস্ট ব্রণের ওপর দিয়ে রাখলে দাগ চলে যায়।

# লবঙ্গ শরীরের ক্ষতিকর উপাদানগুলো বের করে রক্তকে পরিশোধন করতে বেশ ভূমিকা রাখে।

# পিপাসায় বারবার পানি পানের বিড়ম্বনা এড়াতে সকালে ও বিকেলে লবঙ্গ খাওয়া যেতে পারে। এতে পিপাসাজনিত রোগ দূর হবে।

# পেটের রোগ বা জ্বরসহ নানা রোগে আক্রান্তের ফলে খাবারে অরুচি দেখা দিলে লবঙ্গ গুঁড়া করে সকালে খালি পেটে এবং দুপুরে খাবারের পরে খেলে রুচি ফিরে আসবে।

# লবঙ্গ খেলে হজম ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি রক্তপ্রবাহেরও উন্নতি ঘটে।

# লবঙ্গ ক্যান্সার, কলেরা, শরীর ব্যথা ও যকৃতের সমস্যা থেকে শরীরকে রক্ষা করে। লবঙ্গের অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রপার্টিজ যে কোনো জীবাণুকে মারতে ভূমিকা রাখে।

# নিয়মিত লবঙ্গ খেলে সহজেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায়। লংয়ের রস শরীরে ইনসুলিন তৈরিতে সাহায্য করে এবং কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রক্তে শকর্রার মাত্রা বৃদ্ধির আশঙ্কা কমে যায়।

# মাড়ির সমস্যা ও মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে লবঙ্গ বেশ কার্যকর। লংয়ের মুকুল (মাথার অংশ) ওরালপ্যাথোজেনের বৃদ্ধি রোধ করে মুখকে কেসকল রোগের হাত থেকে রক্ষা করে। দুর্গন্ধ দূর করতে প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর সময় দুটি লবঙ্গ মুখে দিয়ে চিবিয়ে ঘুমাতে হবে।

# লবঙ্গে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান রয়েছে, যা আর্থ্রাইটিসের প্রকোপ কমাতে সাহায্য করে। প্রসঙ্গত, জয়েন্টপেইন কমানোর পাশাপাশি হাঁটুতে, পেশির ব্যথা, পিঠে বা হাড়ের ব্যথা কমাতে এই ঘরোয়া ওষুধ বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

# লবঙ্গে থাকা ভিটামিন কে এবং ই, রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এতটাই শক্তিশালী করে যে শরীরে উপস্থিত ভাইরাস সব মারা যায়। ফলে ভাইরাল ফিবারের প্রকোপ কমতে সময় লাগে না।

# আসলে লবঙ্গে উপস্থিত ভোলাটাইল অয়েল শরীরে উপস্থিত টক্সিক উপাদান বের করে দেয়। সেই সঙ্গে জীবাণুও মেরে ফেলে। ফলে সংক্রমণজনিত কষ্ট কমতে মোটেও সময় লাগে না।

# লবঙ্গে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে প্রবেশ করার পর দেহের মধ্যে উপস্থিত টক্সিক উপাদান বের করে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শুধু লিভার নয়, শরীরের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

# ঠান্ডায় শরীরের কোনো অংশ ফুলে উঠলে লবঙ্গ খেতে পারেন। এতে শরীরের ফোলা কমে যাবে।

# শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানিতে আক্রান্ত রোগীরাও লবঙ্গ চিবিয়ে রস খেলে আরাম পাবেন।

# লবঙ্গে উপস্থিত ফেনোলিক কম্পাউন্ড-ইউজিনল এবং ইউজিনল ডেরিভাটিভস শরীরে প্রবেশ করার পর বোন ডেনসিটির (হাড়ে ঘনত্ব) উন্নতি ঘটে। এটি হাড়ের ভেতরের নানাবিধ মিনারেলের ঘাটতিও পূরণ করে। ফলে হাড়ের সমস্যাজনিত যে কোনো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।

# লবঙ্গ ব্রেস্ট ক্যান্সার ও ওভারিয়ান ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

লবঙ্গ খাওয়ার অপকারিতা

উপকারিতা পেতে বেশি বেশি লবঙ্গ খাওয়া অনুচিত। গবেষণায় দেখা গেছে, অনেকেই অকারণে মুখে লবঙ্গ দিয়ে রাখেন, যা উপকারের চেয়ে অপকারই ডেকে আনতে পারে। যাদের রক্তে শর্করার মাত্রা কম, তারা কখনোই বেশি পরিমাণে লবঙ্গ খাবেন না। কেননা, এটি হাইপারগ্লাইসিমিয়ার কারণ হতে পারে।

আবার যাদের অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রেও লবঙ্গ খাওয়ায় র‌্যাশ বা চুলকানির সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে লবঙ্গ খাওয়া থেকে বিরত থাকাই মঙ্গলজনক।

This post was last modified on Tháng mười một 18, 2024 5:53 chiều